কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় একটি কবিতা। এই কবিতায় তিনি মানুষের মধ্যে ঐক্য, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক বন্ধনের গুরুত্বকে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন। ২০২৬ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এই কবিতাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখানে এই কবিতার সমস্ত ছোটো বড় প্রশ্ন অর্থাৎ সমস্ত MCQ, SAQ, 3 মার্কের প্রশ্ন, LAQ (রচনাধর্মী প্রশ্ন) উত্তরসহ তোমাদের একসাথে দেওয়া হল যাতে অনান্য প্রশ্ন গুলোর জন্য অহ্ন কোথাও খোঁজাখুঁজি করতে না হয়। আর যাতে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার আগে সম্পূর্ণভাবে অনুশীলন করতে পারে। অতএব মাধ্যমিক অনান্য বিষয়ের প্রশ্ন উত্তর পেতে আমাদের এই পেজে নজর রাখবে।
এই কবিতার সমস্ত MCQ প্রশ্ন উত্তর /প্রশ্নমান ১
1/ ' আমাদের শিশুদের শব ছড়ানো রয়েছে ' -
উত্তর: কাছে দূরে
2/ ' আমরা ফিরেছি ' -
উত্তর: দোরে দোরে
3/ ' আমাদের ঘর গেছে উড়ে ' পঙক্তিটির ভাবার্থ হল -
উত্তর: আকস্মিক বিপর্যয় ধ্বংস হয়ে গেছে
4/ আমাদের ' পায়ে পায়ে ' রয়েছে -
উত্তর: হিমানীর বাঁধ
5/ ' পায়ে পায়ে হিমানির বাঁধ ' ' হিমানী ' শব্দের অর্থ -
উত্তর: তুষার বা বরফ
6/ ' ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে' কি ছড়ানো রয়েছে?
উত্তর: শিশুদের শব
7/ আমাদের মাথায় -
উত্তর: বোমারু
8/ ' আমাদের কথা কে বা জানে ' - কবিতায় ' আমরা ' কারা?
উত্তর: অসহায় মানুষ
9/ ' আয় আরো বেঁধে বেধে থাকি ' কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: জলই পাষাণ হয়ে আছে
10/ আমাদের ডান পাশে -
উত্তর: ধ্বস
11/ ' আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ' কাব্যাংশটি কবিতায় কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: দুইবার
12/ ' আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ' কবিতায় হিমানীর বাঁধটি রয়েছে?
উত্তর: পায়ে পায়ে
13/ ____ ' হয়তো গেছে মরে ' শূন্যস্থান পূরণ কর।
উত্তর: পৃথিবী
14/ ' আমাদের চোখমুখ ' -
উত্তর: ঢাকা
15/ আমরা ভিখারি _____ মাস।
উত্তর: বারো
16/ ' আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ' কবিতায় ' পথ ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে -
উত্তর: দুইবার
17/ কবি কিভাবে ' বেঁধে বেঁধে ' থাকতে বলেছেন -
উত্তর: হাতে হাত রেখে
18/ আমাদের বাঁয়ে -
উত্তর: গিরিখাত
19/ ' আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ' কবিতাতে কি উড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ঘর
20/ ' আমাদের _____ নেই '
উত্তর: ইতিহাস
21/ ' কে-বা জানে ' কি জানার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আমাদের কথা
22/ শঙ্খ ঘোষের ছদ্মনাম কি?
উত্তর: কুন্তক
23/ ' আমাদের পথে নেই আর ' উদ্ধৃিতাংশে ' পথ ' না থাকার অর্থ -
উত্তর: কোন উপায় নেই
24/ " আমাদের কথা কে বা জানে " - ' আমরা ' হলাম -
উত্তর: অসহায় মানুষ
25/ আমাদের ' ডানপাশে ' এবং ' বাঁয়ে ' রয়েছে যথাক্রমে -
উত্তর: ধ্বস ও গিরিখাত
এই কবিতার সমস্ত SAQ প্রশ্ন উত্তর (প্রশ্নমান ১)
উত্তরঃ পথ না থাকার দরুন আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে আরও 'বেঁধে বেঁধে' থাকতে হবে।
২. 'ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে'- কী ছড়ানো রয়েছে? [মাধ্যমিক ১৯]
উত্তরঃ শিশুদের শব বা মৃতদেহ কাছে দূরে ছড়ানো রয়েছে।
৩. 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটির রচয়িতা কে? [মাধ্যমিক ২২]
উত্তরঃ 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটির রচয়িতা হলেন শঙ্খ ঘোষ।
৪. 'আমাদের ইতিহাস নেই' একথা বলা হয়েছে কেন?
অথবা
'আমাদের ইতিহাস নেই' আমাদের ইতিহাস না থাকার কারণ কী?
উত্তরঃ সাধারণ মানুষ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায় না। সে কারণেই 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় একথা বলা হয়েছে।
৫. 'পৃথিবী হয়তো গেছে মরে' পৃথিবী সম্পর্কে এমন বলার কারণ কী? [মাধ্যমিক ২৪]
অথবা
'পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে'/'পৃথিবী হয়তো গেছে মরে'-একথা বলার কারণ কী/'হয়তো' শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তরঃ 'হয়তো' একটি অনিশ্চয়তাসূচক শব্দ। যুদ্ধ, শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন জর্জরিত, তারা মৃতবৎ। যদিও মৃতদেহের স্তূপের মাঝেই আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে আছে কিছু মানুষ। পৃথিবীর এই জীবস্মৃত অবস্থা দেখেই তাই এই অনিশ্চয়তাসূচক উক্তি।
৬. 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কথকের মাথার উপর কী ঘুরে বেড়াচ্ছে?
উত্তরঃ 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কথকের মাথার উপর দিয়ে বোমারু বিমান ঘুরে বেড়াচ্ছে।
৭. 'আমরা ভিখারি বারোমাস'-একথা বলার অর্থ কী?
অথবা
'আমরা ভিখারি বারোমাস' কবি বারোমাস আমাদের ভিখারি ভেবেছেন কেন?
উত্তরঃ সাধারণ মানুষকে চিরকাল ক্ষমতাবান মানুষদের অনুগ্রহের ওপর বেঁচে থাকতে হয়। তাই কবি ভিখারি শব্দটির দ্বারা সাধারণ মানুষের এই নিঃস্বতা ও অধিকারহীনতাকেই ইঙ্গিত করেছেন।
৮. 'আমাদের মাথায় বোমারু'-বোমারু কী?
উত্তরঃ 'বোমারু' শব্দের অর্থ হল-বোমা নিক্ষেপক। প্রদত্ত অংশে 'বোমারু' বলতে যুদ্ধবিমানকে বোঝানো হয়েছে।
৯. 'আমাদের পথ নেই আর' পথ না থাকার কারণ কী?
উত্তরঃ চতুর্দিকে প্রতিকূলতার ঘেরাটোপ-ডানে ধ্বস, বামে গিরিখাদ, মাথায় বোমাবুর আনাগোনা আর চলার পথে বরফের প্রতিকূলতার কারণেই আর পথ নেই।
১০. 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি কবি শঙ্খ ঘোষের কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তরঃ 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি কবি শঙ্খ ঘোষের 'জলই পাষাণ হয়ে আছে' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
১১. আমাদের মাথার বোমারু' শব্দটির দ্বারা কবি কোন্ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছেন?
উত্তরঃ 'বোমারু' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল বোমা নিক্ষেপক। শব্দটির দ্বারা কবি যুদ্ধবিধ্বস্থ ভয়ংকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
১২. 'পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ'- 'হিমানীর বাঁধ' বলতে কবি কী ইঙ্গিত করেছেন?
উত্তর: পাহাড়ি পথকে বরফ যেমন দুর্গম করে তোলে ঠিক তেমনই নেতিবাচক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের বাঁচার পথকে দুর্গম করে তুলেছে।
১৩. 'আমাদের পথে নেই আর'-'পথ' শব্দটি কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: প্রদত্ত অংশের 'পথ' শব্দটি বাঁচার উপায় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
১৪. 'আমাদের কথা কে-বা জানে'- আমাদের কথা কেউ জানে না কেন?
উত্তর: চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও যে মানুষগুলো আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে আছে, সকলের কাছে তাদের কথা অজ্ঞাত। এজন্যেই তাদের কথা কেউ জানে না।
১৫. 'অথবা এমনই ইতিহাস' সাধারণ মানুষের ইতিহাস কেমন?
উত্তর: সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই অথবা ইতিহাসে তাদের চোখ মুখ ঢাকা।
১৬. 'কিছু কোথাও যদি নেই' তবে কী আছে?
উত্তর: কোথাও কিছু না থাকলেও, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কয়েকজন মানুষ আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে আছে।
১৭. 'আমাদের চোখ মুখ ঢাকা'-এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: বঞ্চিত তথা শোষিত মানুষেরা সবকিছু দেখে শুনেও প্রতিবাদহীন হয়ে থাকে। তাদের এই নির্লিপ্ততাকে বোঝাতে প্রদত্ত মন্তব্যের অবতারণা করা হয়েছে।
১৮. 'কিছুই কোথাও যদি নেই' এই অবস্থায় কী করণীয়?
উত্তর: কোথাও কিছু না থাকলে চারদিকে ঘনায়মান এই মহাশূন্যতার মাঝে একে অপরের হাত ধরে সঙ্ঘবদ্ধভাবে 'বেঁধে বেঁধে থাকাই একান্ত কর্তব্য'।
১৯. 'আমাদের পথ নেই আর'-এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তরঃ বিপন্ন মানুষের চতুর্দিকে রয়েছে মৃত্যুর ফাঁদ আর প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিকূল অবস্থাকে বোঝাতেই কবি এ কথা বলেছেন।
২০. 'তবু তো কজন আছি বাকি'-একথা বলার কারণ কী?
উত্তরঃ বিপন্নতা আর মৃত্যু মিছিলের ভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করে, কিছু মানুষ আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে আছে। তাদের কথা বোঝাতেই এই উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।
২১. 'ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!'- কী ছড়ানো রয়েছে?
উত্তর: 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কথকের বিবৃতি অনুযায়ী শিশুদের শব কাছে দূরে ছড়ানো রয়েছে।
২২. 'কিছুই কোথাও যদি নেই'-এই অবস্থায় কী করণীয়?
উত্তরঃ চারিদিকে ঘনায়মান মহাশূন্যতার মাঝে একে অপরের হাত ধরে সংঘবদ্ধভাবে থাকাই একান্ত করণীয়।
এই কবিতার সমস্ত ৩ মানের প্রশ্ন উত্তর
১. 'আমাদের ইতিহাস নেই'- কাদের ইতিহাস নেই? ইতিহাস নিয়ে এ কথা বলা হয়েছে কেন? [মাধ্যমিক ১৮]
উত্তরঃ বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় বিপন্ন ও অসহায় মানুষদের ইতিহাস না থাকার কথা বলেছেন।
▲ মানব সভ্যতার ক্রমাগ্রগতির মৌনগাথা হল ইতিহাস। কিন্তু ইতিহাস লেখা হয় চেনা ছকে-রাজা মহারাজাদের গুণকীর্তন করতে নতুবা হিংসার ইতিবৃত্ত প্রকাশ করতে।
▲ কবি জীবনানন্দ দাশ যথার্থই বলেছিলেন 'সৃষ্টির মনের কথা মনে হয়-দ্বেষ'। প্রচলিত ইতিহাস তো সেই দ্বেষ, চক্রান্ত আর রক্তপাতেরই ধারাভাষ্য। সেখানে সভ্যতার পিলসুজ (প্রদীপের সলতে) শ্রমজীবী সাধারণ মানুষেরা চিরকালই উপেক্ষিত ও ব্রাত্য। প্রকৃতপক্ষে চিরাচরিত ইতিহাস কোনো সৌহার্দের সুরভী বহন করে আনে না বরং প্রচলিত ইতিহাস যুদ্ধ, শোষণ, ষড়যন্ত্র আর অমানবিকতার কোলাজ তৈরি করে। এজন্য শাসক নিয়ন্ত্রিত প্রচলিত ইতিহাসের পাতায় সভ্যতা রূপায়ণের ঋত্বিক তথা শ্রমজীবী সাধারণ মানুষেরা নেপথ্যচারীই (দৃষ্টির আড়ালেই) রয়ে যায়-তাঁদের ইতিহাস থাকে না।
২. 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কাদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান এই আহ্বানের কারণ কী?
অথবা
'আয় আরো হাতে হাত রেখে/আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি'-এই উদ্ধৃতির মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ সমাজ সচেতন কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় শত বিপর্যয়ের মাঝেও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে থাকা গুটি কয়েক বিপন্ন মানুষের উদ্দেশ্যে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে থাকার এই মৃত্যুঞ্জয়ী আহ্বান জানিয়েছেন।
▲ কবিতায় সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন মানুষদের কথা তুলে ধরেছেন কবি। মানুষগুলি পরিস্থিতির শিকার, তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এইসব মানুষদের ডান দিকের পথ ধ্বসে বুদ্ধ, বামদিক গভীর গিরিখাত দ্বারা বাধা প্রাপ্ত, চলার পথ হিমানীর দুর্লঙ্ঘ্য (যা সহজে লঙ্ঘন বা পার করা যায় না) প্রাচীরে আবদ্ধ, এমনকি মাথার উপর আকাশটাও নিরাপদ নয়-সেখানেও রয়েছে বোমারু বিমানের আনাগোনা। বিপন্ন মানুষগুলি নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও বাঁচাতে ব্যর্থ। এমনই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মৃত্যু মিছিলের মাঝে মৃতবৎ হয়ে বেঁচে আছে তারা।
বিপন্নতার এই চোরাবালি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল সঙ্ঘবদ্ধতা। মহা শক্তিশালী অতি দাম্ভিক ডাইনেসোরেরা পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারেনি কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ পিঁপড়ের দল আজও পৃথিবীর বুকে টিকে আছে। এজন্যেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাতে হাত রেখে সঙ্ঘবদ্ধভাবে জীবন জয়ের এই আহ্বান করেছেন।
৩. 'আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে-'উক্তির মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ বিশ শতকের বিবেকবান কবি শঙ্খ ঘোষ প্রণীত 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কবি শিশুদের মৃতদেহের প্রসঙ্গ উত্থাপনের মধ্যে দিয়ে সভ্যতার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের 'অশনি সংকেত' অঙ্কন করেছেন।
শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। নিষ্পাপ শিশুরা দীর্ঘজীবী হবে-এটাই সকলের প্রার্থনা। অথচ যুদ্ধ-দাঙ্গা-সন্ত্রাস ও হানাহানির পাপচক্রে সেই শিশুরাই আজকের অসহায় অভিমন্যু। স্বার্থান্ধ মানুষের হিংসার যূপকাষ্ঠে (হাড়ি কাঠ বা যে কাঠে বলি দেওয়া হয়) তারা বলিপ্রদ। সভ্যতার এই পৈশাচিকতার চিহ্নই ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।
ছড়িয়ে থাকা শিশুদের শবে ভবিষ্যতের স্বপ্ন সমাধির ইঙ্গিত স্পষ্ট। যেই নরক-নগরে শিশু তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মৃত্যু অনিবার্য, যেখানে মানব সভ্যতার পতন নিশ্চিত। আমরা বেঁচে আছি অথচ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মৃত-এই নিষ্পাপ প্রাণের অপচয় অশ্রু বিসর্জনের উপকরণ নয়, 'হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী'-র কলঙ্ক।
৪. 'আমাদের পথ নেই কোনো' কোন্ পথের কথা বলা হয়েছে? আমাদের পথ কেন নেই?
অথবা
'আমাদের পথ নেই আর' আমাদের পথ নেই কেন? এই পথের জন্য কবির যে আহ্বান সূচিত হয়েছে তা লেখো।
উত্তরঃ যুগ সচেতন কবি শঙ্খ ঘোষ প্রণীত 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতা থেকে প্রদত্ত এই অংশে 'পথ' বলতে কোনো নির্দিষ্ট সরণিকে বোঝানো হয়নি, বোঝানো হয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মৃত্যুর হাতছানি থেকে পরিত্রাণের উপায়কে।
স্বার্থান্ধ ও ক্ষমতালোভীদের বৈরীভাবনায় মানুষ আজ বিপন্ন ও অসহায়। তাদের চতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে মৃত্যুর নিশ্ছিদ্র আয়োজন। ডান দিকের পথ ধ্বসে রুদ্ধ, বামদিক গভীর গিরিখাদ দ্বারা বাধা প্রাপ্ত, চলার পথ হিমানীর দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীরে আবদ্ধ, এমনকি মাথার উপর আকাশটাও নিরাপদ নয়-সেখানেও রয়েছে বোমারু বিমানের আনাগোনা। বিপন্ন মানুষগুলি নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও বাঁচাতে ব্যর্থ। প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করবার বা মৃত্যুর আয়োজন থেকে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে ওঠার কোনো পথ বা উপায় হয়তো তাদের সামনে খোলা নেই।
এই কবিতার গুরুত্বপূর্ণ ৫ মানের প্রশ্ন উত্তর
১. 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো। [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তর: যুগ সচেতন কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি বিপন্নতার মাঝে আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে থাকা গুটি কয়েক মানুষের জবানিতে কবি স্বয়ং উচ্চারণ করেছেন।
কবিতার শুরুতেই একদল বিপন্ন মানুষের কণ্ঠে শোনা যায় মৃত্যুর নিশ্চিদ্র আয়োজনের কথা।
তাদের ডানদিকে ভূমিধ্বস নেমেছে, বাঁ দিকে রয়েছে গভীর গিরিখাদ, মাথায় বোমারু বিমানের আক্ষ্ম নাগোনা আর হিমানীর বাঁধে চলার পথ বুদ্ধ। তাদের সামনে বাঁচার কোনো পথ নেই, নিরাপদ আশ্রয়ও নেই। বোমার আঘাতে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, অর্থাৎ তারা আশ্রয়হীন.... সম্ভাব্য মৃত্যুই তাদের নিশ্চিত আশ্রয়। এমনকি তাদের ভবিষ্যৎও মৃত। তাই শিশুদের মৃতদেহ প্রকাশ্য রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে কবির আহ্বান- "আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।"
কেবল বাহ্যিক প্রতিকূলতা নয়, বিপন্ন মানুষেরা আজ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই দুর্বলতার প্রধান কারণ তারা তাদের আত্মইতিহাস বিস্মৃত হয়েছে কিংবা চোখ-মুখ বুজে পরিস্থিতিকে নির্লিপ্ত ভাবে তারা মেনে নিতে শিখেছে। তারা জীবনের কাঙালপনায় অভ্যস্ত, ভিক্ষা পাত্রকেই তারা নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। কখনো জীবনকে বাঁচার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তারা সচেষ্ট হয়নি।
ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতাকে বোঝাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বিসর্জন' নাটকে লিখেছিলেন 'আয় ভাই, নির্ভয়ে দেবতাহীন হয়ে/আরো কাছাকাছি সবে বেঁধে বেঁধে থাকি।' মানবতার এই আদর্শের অনুরণনই যেন শঙ্খ ঘোষের আলোচ্য কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে। কবিতায় সামাজিক অবক্ষয় বা সংকটের ঊর্ধ্বে মানবতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। আশাবাদী কবি জানেন, বিপন্নতাকে পরাস্ত করতে পারে সঙ্ঘবদ্ধতা। ইতিহাস সাক্ষী আছে, ডাইনোসরের মতো অতিদাম্ভিক প্রাণী পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে পারেনি কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ পিঁপড়ের দল আজও টিকে আছে। তাই কবি বিপন্নতা থেকে বাঁচবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন-পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর এবং বাঁচার জন্য একে অপরকে হাতে হাত ধরে আগলে রাখার।
Related Search : আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা প্রশ্নোত্তর || আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি MCQ মাধ্যমিক ২০২৬ || আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি SAQ প্রশ্নোত্তর || আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ৩ নম্বর প্রশ্ন মাধ্যমিক || আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ৫ নম্বর প্রশ্ন উত্তর || শঙ্খ ঘোষ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ব্যাখ্যা || আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর || মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর ২০২৬ || Class 10 Bengali Suggestion 2026 || Bengali Madhyamik Poem Question Answer 2026
Hi, Please Do not Spam in Comments.