সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আবারও একটি নতুন আর্টিকেল এ তোমাদের জন্য, মাধ্যমিক ২০২৬ এর "অসুখী একজন" কবিতার দুটি LAQ (রচনাধর্মী) প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল। তোমাদের সুবিধার্থে উত্তরের মধ্যে থাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কবিতার লাইন গুলোকে underline করে দেওয়া আছে। আরো অন্যান্য পাঠের প্রশ্ন উত্তর গুলো পেতে আমাদের এই পেজে নজর রাখবে।
১. 'তারপর যুদ্ধ এল'-'তারপর' বলতে কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে? যুদ্ধের পরিণতি বা ভয়াবহতার পরিচয় দাও।
অথবা
“যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠ'
কয়লা"-অসুখী একজন কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো। [মাধ্যমিক ১৭]
অনুরূপ প্রশ্ন
"সব চূর্ণ হয়ে গেল জ্বলে গেল আগুনে'-'সব বলতে কী কী বোঝানো হয়েছে? কবিতা অনুসারে পরিস্থিতির বর্ণনা দাও।
অথবা
'অসুখী একজন' কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: নোবেলজয়ী চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত, নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত 'অসুখী একজন' কবিতায় অপেক্ষামানা নারীর মধ্যে ভালোবাসার অনির্বাণ রূপটি ফুটে উঠেছে। কথক তার প্রিয়তমাকে রেখে বহুদূরে চলে যান। অপেক্ষারতা মেয়েটি জানতো না, তার প্রিয়তম সময়ের সরণি বেয়ে আর কখনো ফিরে আসবে না।
"অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়
আমি চলে গেলাম দূরে...... দূরে।
সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসবো না।"
প্রিয়জন বিদায় নেওয়ার পর অপেক্ষারতা মেয়েটির পথ চাওয়া দুটি চোখ দেখে সময়ের নিষ্ঠুর পরিহাস। প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে সময়ের পাল্লা ভারী হয়ে তার মাথায় যেন পরপর পাথরের মতো বছরগুলি নেমে আসতে থাকে। মেয়েটির অপেক্ষার দিনগুলির পরবর্তী সময়কে বোঝাতে 'তারপর' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
যুদ্ধের পরিণতি: যুদ্ধ কোনোদিনও মানব জীবনে ভালোবাসার সৌরভ বয়ে আনে না। মহাভারতের রণাঙ্গন থেকে অতি সম্প্রতি ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ প্রতিক্ষেত্রেই আমরা পেয়েছি ধ্বংসের দুঃস্বপ্ন আর রক্তের আলপনা। আমাদের পাঠ্য কবিতাতেও এই চিত্রের ব্যতিক্রম হয়নি-
"তারপর যুদ্ধ এল
রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো।"
-রক্তের আগ্নেয় পাহাড়ের মতো সমতলভূমির বুকে অতর্কিতেই আছড়ে পড়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ। ফলস্বরূপ শান্ত শহরের বুকে নেমে আসে প্রলয়ের মহাতান্ডব। সমস্ত সমতলে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধের আগুন। নিষ্পাপ শিশুরা পর্যন্ত যুদ্ধের ভয়াবহতার হাত থেকে নিস্তার পায় না।
"নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?" যুদ্ধের আঘাতে শুধু ঘরবাড়িই ধ্বংস হয়নি, দৈব মহিমার অন্তঃসারশূন্যতাকে প্রমাণ করে ধ্যানমগ্ন দেবতার মূর্তিগুলিও মন্দির থেকে উল্টে পড়ে খণ্ড খণ্ড হয়। গৃহত্যাগী কথকের শৈশবস্মৃতি বিজড়িত মিষ্টি বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গসহ সবকিছুই চূর্ণ হয়ে জ্বলে যায় যুদ্ধের আগুনে।
"যেখানে ছিল শহর
সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠ কয়লা"
প্রাণচঞ্চল শহরটি যুদ্ধ শেষে পরিণত হয় কাঠ-কয়লায় ঘেরা জনহীন শ্মশানে। চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে দোমড়ানো লোহা, মৃত মূর্তির বীভৎস মাথা আর রক্তের কালো দাগ। যুদ্ধ সব কিছু ধ্বংস করতে পারলেও অপেক্ষারতা মেয়েটির হৃদয়ের ভালোবাসাকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি। সে যেন বৈয়ব পদাবলীর শ্রীরাধিকার মতেই শূন্য বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্য প্রতীক্ষায় উন্মুখ। তাই ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক হয়ে মৃত্যুভূমির মাঝে সে একাকিনী দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়জনের অন্তহীন প্রতীক্ষায়।
২. 'অসুখী একজন' কবিতায় প্রকৃতপক্ষে অসুখী কে?-কবিতা অবলম্বনে তোমার উত্তর বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: সুখের বিপরীত অবস্থান যদি হয়ে থাকে অসুখী হওয়া, তবে পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় অসুখী প্রতিজন। পাঠ্য কবিতাটি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে আলোচ্য কবিতায় অসুখী তিনজন- (ক) কথক, (খ) অপেক্ষারতা মেয়েটি এবং (গ) দেশমাতা বা স্বদেশ।
- কথক কেন অসুখীঃ কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিয়ে কথক গৃহত্যাগী হয়েছেন। তিনি নিজের প্রেয়সীকে বিদায় পর্যন্ত জানিয়ে যেতে পারেন নি। এমনকি তিনি কোনোদিনও তার প্রিয়তমার কাছে ফিরেও আসতে পারেননি। প্রিয়জনের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত চিরদূরত্ব তৈরি করার কারণেই তার হৃদয়ে জ্বলছে তুষের আগুন। এজন্যেই তিনি অসুখী।
- অপেক্ষারতা মেয়েটি কেন অসুখীঃ প্রিয়জন বিদায় নেওয়ার ঘটনাটি তার প্রেয়সীর কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। এজন্য মেয়েটি তার প্রিয়ের জন্য অপেক্ষার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে অশেষ ধৈর্যের পরিচয় দিতে থাকে। প্রতিদিন তার যন্ত্রণা চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে বেড়ে চলে; তবু সে শূন্য বৃন্দাবনে শ্রীরাধিকার মতো কৃষ্ণের প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থেকেছে। এজন্যই তার হৃদয়ে সুখের লেশমাত্র ছিল না।
- মাতৃভূমি কেন অসুখীঃ দেশমায়ের শরীর যখন সন্তানের রক্তে স্নাত হয়, দেশের সন্তানেরা যখন অশ্রুপ্লাবণে ভাসে তখন দেশমাতাও অসুখী হয়ে ওঠেন।
--তবে সবদিক বিচার করে বলা যায় যে, সব থেকে বেশি অসুখী হল মেয়েটি। কারণ তার দুই চোখ দেখেছে সময়ের নিষ্ঠুর পরিহাস, তার মস্তিষ্ক প্রতীক্ষার প্রস্তরখন্ডে ভারাক্রান্ত হয়েছে। সর্বগ্রাসী যুদ্ধ শহরকে শ্মশানে পরিণত করে দিলেও, সেই সর্বহারার মহাশ্মশানে দাঁড়িয়ে মেয়েটি তার প্রিয়ের প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থেকেছে। তার প্রিয়জন কিন্তু ফিরে আসেনি, তার প্রেম তৃষ্ণারও নিবারণ হয়নি। তাই এই ধূলাধরণীতে মেয়েটি চিরঅসুখী হয়েই রয়ে গেছে। অর্থাৎ এই আলোচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, 'অসুখী একজন' কবিতায় সকলের মনে সুখের অভাব থাকলেও প্রকৃত অসুখী হল অপেক্ষারতা মেয়েটি।
আগের পর্ব
অসুখী একজন কবিতার সমস্ত MCQ
অসুখী একজন কবিতার সমস্ত SAQ
অসুখী একজন কবিতার সমস্ত ৩ মার্কের প্রশ্ন
অসুখী একজন কবিতার সমস্ত MCQ
অসুখী একজন কবিতার সমস্ত SAQ
অসুখী একজন কবিতার সমস্ত ৩ মার্কের প্রশ্ন
Related Search : অসুখী একজন কবিতা প্রশ্ন উত্তর ২০২৬ || অসুখী একজন কবিতার ৫ মার্কের প্রশ্ন উত্তর || পাবলো নেরুদার অসুখী একজন কবিতার বিশ্লেষণ || নবারুণ ভট্টাচার্যের তরজমা অসুখী একজন কবিতা || মাধ্যমিক বাংলা ২০২৬ সাজেশন ও প্রশ্ন || অসুখী একজন কবিতায় যুদ্ধের প্রভাব || অসুখী একজন কবিতায় অপেক্ষার আখ্যান || মাধ্যমিক বাংলা কবিতা প্রশ্নোত্তর ||Asukhi Ekjon poem 3 mark questions and answers || অসুখী একজন 3 মার্ক প্রশ্ন উত্তর || অসুখী একজন Bengali English mix question answer || মাধ্যমিক ২০২৬ Asukhi Ekjon question answer || Pablo Neruda অসুখী একজন poem study || Asukhi Ekjon poem important questions medium 2026 || অসুখী একজন কবিতা প্রশ্ন উত্তর for Madhyamik || অসুখী একজন analysis and questions in Bengali English || বাংলা কবিতা অসুখী একজন 3 marks questions || Asukhi Ekjon bangla poem summary and questions
Hi, Please Do not Spam in Comments.