কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা এক অসাধারণ কবিতা “দিন ফুরোলে”। এই কবিতায় কিছু বাচ্চা তাদের দিনের শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। তখন তারা দেখে আকাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে, চারপাশে কত রকমের রঙ ছড়িয়ে পড়েছে! এই রঙের খেলা এত সুন্দর, যেন আকাশে লক্ষ রঙের আলো ঝলকাচ্ছে। মনে হয় আকাশ থেকে রঙের বৃষ্টি পড়ছে! কিন্তু বাচ্চারা খুবই আফসোস করে, কারণ তারা আর এই দৃশ্য দেখতে পারবে না। সময় শেষ, তাদের বাড়ি ফিরতে হবে। যদি বাড়ি ফিরতে দেরি হয়, তাহলে মা–বাবা রেগে যাবেন। তাই তারা মন খারাপ করে, পা ধুয়ে নিজেদের “মনখারাপের গর্তে” ফিরে যায়, মানে নিজেদের ঘরে, নিজেদের একঘেয়ে জীবনে ফিরে যায়।
১. কবিতাটিতে 'চ্ছ' দিয়ে কতগুলো শব্দ আছে লেখো, প্রত্যেকটি শব্দ ব্যবহার করে একটি করে আলাদা বাক্য লেখো।
উত্তরঃ কবিতাটিতে 'চ্ছ' দিয়ে যে শব্দগুলি আছে তা হল – ইচ্ছেয়, দুচ্ছাই, মুচ্ছো, গুচ্ছে, বাচ্ছা, আচ্ছা, কুচ্ছিৎ, ধুচ্ছি।
- ইচ্ছেয় - ওর ইচ্ছেয় যখন খুশি তখনই বেরিয়ে পড়ে।
- দুচ্ছাই - দুচ্ছাই! পরীক্ষার দিনেই এমন বৃষ্টি!
- মুচ্ছো – প্রচণ্ড গরমে মেয়েটি হঠাৎ মুচ্ছো গেল।
- গুচ্ছে - আমার বইগুলো কিছুতেই গুচ্ছে না, সব এলোমেলো হয়ে আছে।
- বাচ্ছা - মাঠে অনেক বাচ্ছা মিলে খেলাধুলা করছে।
- আচ্ছা – আচ্ছা, ঠিক আছে এখন ভালো করে পড়াশোনা করো।
- কুচ্ছিৎ - রাস্তার ধারে কুচ্ছিৎ দৃশ্যটি দেখে মন খারাপ হয়ে গেল।
- ধুচ্ছি - ধুচ্ছি, আবার ভুল করে বইটা আনতে ভুলে গেছি!
২. নীচের ছকটি সম্পূর্ণ করো :
বাম দিক | ডান দিক |
---|---|
সূর্য | সুয়্যি |
দুরছাই | দুচ্ছাই |
মূর্ছা | মুচ্ছো |
অন্ধকার | আঁধার |
কুৎসিত | কুচ্ছিত |
সন্ধ্যা | সন্ধে |
৩. 'লক্ষ' শব্দটিকে দুটি পৃথক অর্থে ব্যবহার করে দুটি পৃথক বাক্য লেখো। 'লক্ষ্য' শব্দটির সঙ্গে এই দুটি অর্থে পার্থক্য দেখিয়ে আরও একটি নতুন বাক্য লেখো।
উত্তরঃ
- "লক্ষ" শব্দের দুটি পৃথক অর্থে বাক্য:
- ক. সংখ্যা অর্থে:– সে আজ এক লক্ষ টাকা পেয়েছে।
- খ. খেয়াল করা অর্থে:– আমি লক্ষ করলাম, সে প্রতিদিন ক্লাসে বই পড়ে।
- 'লক্ষ্য' শব্দের সঙ্গে পার্থক্যসহ বাক্য:
- ক.'লক্ষ্য' শব্দের অর্থ হলো উদ্দেশ্য বা যে উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্ট করা হয়। বাক্য: তার প্রধান লক্ষ্য হলো ভালো ছাত্র হওয়া।
৪. 'এক গঙ্গাজল' শব্দবন্ধটির মানে 'গঙ্গায় যত জল ধরে সব' অর্থাৎ কিনা অনেকখানি জল। নিচের স্তম্ভদুটির ডান দিক ও বাম দিক ঠিকভাবে মেলাতে পারলে আরো কিছু এরকম শব্দবন্ধ তৈরি করতে পারবে।
প্রশ্ন:
বাম দিক | ডান দিক |
---|---|
এক মাথা | হাসি |
এক ক্লাস | আম |
এক আকাশ | ধুলো |
এক ঘর | ধান |
এক কাঁড়ি | পায়েস |
এক ঝুড়ি | ছাত্র |
এক হাঁড়ি | তারা |
এক মুঠো | টাকা |
এক মুখ | লোক |
এক কাহন | চিনি |
উত্তর:
বাম দিক | ডান দিক |
---|---|
এক মাথা | ধুলো |
এক ক্লাস | ছাত্র |
এক আকাশ | তারা |
এক ঘর | হাসি |
এক কাঁড়ি | চিনি |
এক ঝুড়ি | আম |
এক হাঁড়ি | পায়েস |
এক মুঠো | টাকা |
এক মুখ | লোক |
এক কাহন | গঙ্গাজল |
৫. নীচের বিশেষ্যগুলির আগে উপযুক্ত বিশেষণ বসিয়ে বাক্য রচনা:
সূয্যি - উজ্জ্বল সূয্যি আকাশে উঠে এসেছে।
দৃশ্য - অদ্ভুত দৃশ্য আজকের এক অনুষ্ঠানে দেখলাম।
বাক্স - বড় বাক্স গ্যারেজে রাখা আছে।
বাপ-মা - দয়ালু বাপ-মা সন্তানের জন্য সবকিছু ত্যাগ করে।
গর্ত - অদ্ভুত গর্ত পাহাড়ে পাওয়া গেছে।
ঠ্যাং - দীর্ঘ ঠ্যাং থাকায় সে খুব দ্রুত হাঁটে।
গাদা - গভীর গাদা বইয়ের মাঝে পড়ে ছিল।
ঘর - আলোকিত ঘর আমাদের বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় স্থান।
ধান - সোনা ঝরা ধান মাঠে দোলা দিচ্ছে।
জল - ঠাণ্ডা জল গরমে খুব ভালো লাগে।
৬. নীচের শব্দগুলির সমার্থক শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে বের করো:
বারি - জল।
অরুন - সূয্যি।
অম্বর - আকাশ।
পেটিকা - বাক্স।
অজ্ঞান - মুচ্ছো।
গোছা - গুচ্ছে।
বিষাদ - মন খারাপ।
বন্দর - গর্ত।
পা - ঠ্যাং।
বিশ্রী - কুচ্ছি।
৭. নীচের প্রশ্নগুলির বিপরীতার্থক শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে নাও:
ভালো - খারাপ।
বুড়ো - বাচ্চা।
মিথ্যা - সত্যি।
বাইরে - ঘরে।
সুশ্রী - কুচ্ছিৎ।
৮. কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো:
৮.১ চমকে দেবেন লক্ষ রঙের দৃশ্য।
উত্তরঃ দৃশ্যে - অধিকরণ কারক,
'এ' বিভক্তি।
৮.২ বাপ-মায়েরা যাবেই তবে মুচ্ছো।
উত্তরঃ বাপ-মায়েরা – কর্তা কারক,
প্রথমা বিভক্তি (–রা)।
(কারা যাবে? বাপ-মায়েরা)
৮.৩ কেই বা খুলে দেখছে রঙের বাক্স।
উত্তরঃ রঙের – সম্বন্ধ কারক,
ষষ্ঠী বিভক্তি (–এর)।
৮.৪ নিজের নিজের মন খারাপের গর্তে।
উত্তরঃ গর্তে – অধিকরণ কারক,
সপ্তমী বিভক্তি (–এ)।
৮.৫ এক গঙ্গা জল দিয়ে তাই ধুচ্ছি।
উত্তরঃ এক গঙ্গা জল দিয়ে – করণ কারক,
তৃতীয়া বিভক্তি (–দিয়ে)।
(কি দিয়ে ধুচ্ছি? এক গঙ্গা জল দিয়ে)
৯. এক কথায় উত্তর দাও:
প্রশ্ন ৯.১: সূর্য ডুবে যাওয়ায় কথকরা 'দুচ্ছাই' বলছে কেন?
উত্তর: সূর্য ডুবে যাওয়ায় তারা দৃশ্যটি আর দেখতে পাবে না জন্য কথক ‘দুচ্ছাই’ বলেন।
প্রশ্ন ৯.২: কে এক্ষুণি আকাশ জুড়ে লক্ষ রঙের দৃশ্যে চমকে দেবেন?
উত্তর: সূর্য।
প্রশ্ন ৯.৩: কথকরা কেন সেই দৃশ্য দেখতে পাবে না?
উত্তর: কথকরা স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে যাবে এই কারণে তারা সেই দৃশ্য দেখতে পাবে না।
প্রশ্ন ৯.৪: কথকরা কেন বলেছে, 'কেই বা খুলে দেখছে রঙের বাক্স!'?
উত্তর: কেউ সেই সৌন্দর্য লক্ষ্য করছে না জন্য কথক এরূপ বলেছেন।
প্রশ্ন ৯.৫: বাপ মায়েরা কী হলে 'মুচ্ছো' যাবেন?
উত্তর: স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হলে মুচ্ছো যাবেন।
প্রশ্ন ৯.৬: পাখিরা কোথা থেকে কোথায় উড়ে যায়?
উত্তর: পাখিরা আকাশ থেকে বাসার দিকে উড়ে যায়।
প্রশ্ন ৯.৭: কথকরা কেন বলেছে তাদের 'নিজের নিজের মন খারাপের গর্তে' ফিরতে হবে?
উত্তর: বাস্তব জীবনে ফিরতে হচ্ছে তাই কথক এই মন্তব্য করেন।
প্রশ্ন ৯.৮: বাবা কী বলবেন?
উত্তর: বাবা বলবেন “শুধু দৌড়োলে চলে?”
প্রশ্ন ৯.৯: মা-ই বা বাড়ি ফিরলে কী বলবেন?
উত্তর: বাড়ি ফিরলে মা বলবেন “ঘামতে ঘামতে ছুটতে হবে না?”
প্রশ্ন ৯.১০: কথকরা কেন 'এক গঙ্গা জল দিয়ে' পা ধুচ্ছে?
উত্তর: কথকরা পা ঠান্ডা করতে বা শান্ত হওয়ার জন্য এক গঙ্গা জল দিয়ে পা ধুচ্ছেন।
১০. ব্যাখ্যা করো:
১০.১ “সূর্যি নাকি...... ডুব দিয়েছে?”
ব্যাখ্যা: কথকেরা অবাক হয়ে বলছেন সূর্য কি সত্যিই ডুবে গেছে? তারা এতটাই ব্যস্ত ছিল যে খেয়ালই করতে পারেনি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এতে তাদের হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ পেয়েছে।
১০.২ “আকাশ জুড়ে...... লক্ষ রঙের দৃশ্য।”
ব্যাখ্যা: সূর্যাস্তের সময় আকাশে যে অসাধারণ রঙের খেলা হয়, সেই সুন্দর দৃশ্যকে বোঝানো হয়েছে। এটি প্রকৃতির এক মনমুগ্ধকর দৃশ্য।
১০.৩ “লক্ষ, বা তা হতেও পারে...... রঙের বৃষ্টি!”
ব্যাখ্যা: আকাশে এত রঙ রয়েছে যে মনে হচ্ছে যেন রঙের বৃষ্টি পড়ছে!
১০.৪ “আমরা কি আর......... যাবেই তবে মুচ্ছো।”
ব্যাখ্যা: কথকরা বলছেন – আমরা আর রঙের সেই সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারব না কারণ এখনই বাড়ি যেতে হবে, না হলে মা-বাবা রাগ করবেন।
১১. নিজের ভাষায় উত্তর লেখঃ
১১.১ কবিতাটি অবলোকনে তোমার দেখা একটি গোধূলির রূপ বর্ণনা করো।
উত্তর:
আমি একদিন গোধূলি বেলায় দেখেছিলাম আকাশে রঙ মিলেমিশে এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি হয়েছে। সূর্য ডোবার সময় সূর্যের সেই লাল আভা, কমলা আর সোনালি রঙে আকাশটা যেন রাঙিয়ে উঠেছিল, গাছের পাতাগুলোতে সেই আলো পড়ে যেন ঝকঝক করছে। পাখিরা ডাকতে ডাকতে নিজেদের বাসায় ফিরছিল, চারদিক হালকা আলোয় ভরে গিয়েছিল, হাওয়া ছিল মৃদু। সব মিলিয়ে দৃশ্যটা ছিল মনমুগ্ধকর এক অসাধারণ প্রাপ্তি।
১১.২ কবিতাটিতে ছোটো ছেলেমেয়েদের কাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? সন্ধেবেলায় ঘরে ফেরাকে ‘মনখারাপের গর্তে’ ফেরা বলে কেন মনে হয়েছে? খেলা থেকে সন্ধেবেলা বাড়ি ফেরার দুঃখ নিয়ে তোমার অনুভূতি লেখো।
উত্তর:
কবিতায় ছোটো ছেলেমেয়েদের তুলনা করা হয়েছে পাখিদের সঙ্গে। যেমন পাখিরা সন্ধেবেলায় নীড়ে (বাসায়) ফেরে, ঠিক তেমনি ছেলেমেয়েরাও খেলা শেষে বাড়ি ফেরে। তবে ওদের ঘরে ফেরা মানে শুধু ফেরাই নয়, ওদের মন খারাপ হয়, কারণ খেলা ফেলে ফিরতে যে হয় ঘরে। তাই একে বলা হয়েছে “মনখারাপের গর্তে” ফেরা।
আমার অনুভূতি:
সন্ধে হলেই খেলার মাঠ ছেড়ে বাড়ি ফিরতে হয়, তখন খুব মন খারাপ হয়। বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ানো, হাসি-ঠাট্টা সব থেমে যায়। মনে হয় যেন আনন্দের সময়টা হঠাৎ শেষ হয়ে গেল। বাড়ি ফিরেও মনটা শুধুই খেলা খেলা করে। তাই মনে হয়, যেন “মনখারাপের গর্তে” পড়ে গেছি। মনে হয় যদি আরও একটু খেলা যেত! মা-বাবা ডাকেন, পড়তে বসতে হয়, তাই খেলা ছেড়ে মন খারাপ করেই ফিরি।